আজকাল কিছু সংগঠন যারা নকল ভগবান বানিয়ে পূজা করে, তারা কোনভাবে তাদের দলীয় নকল ভগবানের ভগবত্বা শাস্ত্রীয়ভাবে প্রমাণ করতে না পেরে হিংসাপরায়ণ হয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্তের উপর আঙুল তোলে। এসমস্ত নির্লজ্জ্ব ব্যাক্তিরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু-কেও অপমান করে।
সম্প্রতি তারা শ্রীমদ্ভাগবতের একটি শ্লোক নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে। শ্লোকটি হল,
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্।
যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ।।
কলিযুগে যেসব বুদ্ধিমান মানুষেরা ভগবৎ-আরাধনার উদ্দেশ্যে সঙ্কীর্তন যজ্ঞানুষ্ঠান করেন, তারা অবিরাম শ্রীকৃষ্ণের নামগানের মাধ্যমে ভগবৎ-অবতারের আরাধনা করে থাকেন। যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তার সঙ্গে পার্ষদরূপে রয়েছেন তার অন্তরগ সঙ্গীরা, সেবকগণ, অস্ত্র এবং সহযোগীবৃন্দ। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।৩২)
এই শ্লোকদ্বারা প্রকৃতপক্ষে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে স্বয়ং ভগবান তা প্রতিপন্ন হয়। কারণ এই শ্লোকে বর্ণিত অবতারের বৈশিষ্ট্যের সাথে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৈশিষ্ট্যই মিলে।
এখন নকল ভগবানের উপাসকেরা যেহেতু তাদের মতকে শাস্ত্র দ্বারা প্রমাণ করতে পারে না সেহেতু, হিংসাবশত গৌড়ীয় সিদ্ধান্তের উপর আঙুল তুলে শ্রীমন্মহাপ্রভুর অপমান করে। তাদের এসকল অপপ্রচারের জবাব দেয়া হবে এই আর্টিকেলে।
᯽প্রথম শঙ্কা নিবারণ᯽
তারা দাবী করে যে এই শ্লোক দ্বারা নাকি কলির অবতারের কথা বলা হয়নি এবং “যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ” এই অর্থ নাকি বৈষ্ণবদের বানানো। চলুন সত্য কী তা দেখে নেয়া যাক।
তো এই শ্লোকের অন্বয় দেখা যাক। বুদ্ধিমান ব্যাক্তি অন্বয় দেখলেই সত্যতা বুঝতে পারবেন।
এই শ্লোকে ত্বিষাকৃষ্ণং পদটির অন্বয় এরূপ
ত্বিষা+অকৃষ্ণং
ত্বিষা শব্দে অঙ্গকান্তি এবং অকৃষ্ণং শব্দে কৃষ্ণ বর্ণ নয় এরূপ অর্থ প্রকাশ করে। এর থেকে ❝যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ❞ এই বাক্য সিদ্ধ হয়। এখন পাখন্ডীরা এর বিরোধী করবে সেটিই স্বাভাবিক। তাই এর স্বপক্ষে কিছু প্রমাণ দেয়া যাক।
শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর এই শ্লোকের টীকায় লিখেছেন, “কৃষ্ণেতি নানা-কলিযুগপক্ষে কৃষ্ণ বর্ণ দেহং; রূক্ষত্বং ব্যাবর্ত্তয়তি ত্বিষা কান্ত্যা অকৃষ্ণং ইন্দ্রনিলমণিবদুজ্জ্বলম ইত্যর্থঃ।” যার অর্থ হল ‘কৃষ্ণ’ ইত্যাদি কলিযুগপক্ষে কৃষ্ণবর্ণ দেহরুক্ষ নহে ইহা জানাইবার জন্য ত্বিষা অর্থাৎ কান্তি দ্বারা অকৃষ্ণ- ইন্দ্রনিলমণির ন্যায় উজ্জ্বল।
চক্রবর্তীপাদ এখানে এরূপ বিশ্লেষণই করেছেন যে, অবতারের অঙ্গকান্তি হবে অকৃষ্ণ।
এখন আপনারা হয়তো ধৃষ্টতা প্রদর্শন পূর্বক বলবেন যে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর বৈষ্ণব ছিলেন তাই এটা আপনারা মানবেন না।
এজন্য আমি আরেকটি টীকা প্রদর্শন করব। আর সেটি হল শ্রীমদ্ভাগবতের সর্বশ্রেষ্ঠ টীকা শ্রীপাদ শ্রীধর স্বামীর ❝ ভাবার্থ- দীপিকা ❞
শ্রীধর স্বামীপাদ এই শ্লোকের টীকায় লিখেছেন,
ত্বিষা কান্ত্যাঽকৃষ্ণমিন্দ্রনীলমণিবদুজ্জ্বলম্- অঙ্গকান্তি অকৃষ্ণ, ইন্দ্রনীলমণি ন্যায় উজ্জ্বল।
এখানে শ্রীধর স্বামীও এটাই বলছেন যে কলির অবতারের গায়ের রং হবে অকৃষ্ণ।
এখন যারা এর বিরোধিতা করেন তারা কী শ্রীধর স্বামীকে ভুল বলবেন? যদি আপনারা তেমনটি বলেন তাহলে আপনাদেরকেই মূর্খ বলতে হবে। কারণ এই শ্রীধর স্বামী সেই আচার্য যার ভাগবত ভাষ্যে স্বয়ং মহাদেব লিখে দিয়েছিলেন,
অহং বেত্তি শুকো বেত্তি ব্যাসো বেত্তি ন বেত্তি বা।
শ্রীধরঃ সকলং বেত্তি শ্রীনৃসিংহ প্রসাদতঃ।।
মহাদেব বলছেন, “আমি যা জানি, শুক যা জানে, ব্যাস যা জানতেও পারে কিবা নাও জানতে পারে। কিন্ত নৃসিংহদেবের কৃপায় শ্রীধর সেই সকলই জানেন।”
কাজেই শ্রীধর স্বামীর বাক্য অবশ্যই অব্যার্থ।
এছাড়া ভাগবতমে আরও বলা হয়েছে,
আসন্ বর্ণাস্ত্রয়ো হ্যস্য গৃহ্ণতোঽনুযুগং তনুঃ।
শুক্লো রক্তস্তথা পীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ।।
তোমার পুত্র কৃষ্ণ প্রতিযুগে তার শ্রীমূর্তি প্রকাশ করেন। পূর্বে ইনি শুক্ল, রক্ত ও পীতবর্ণ ধারণ করে প্রকাশিত হয়েছিলেন। সম্প্রতি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে প্রকট হয়েছেন। (শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৮।১৩)
এখানে শুক্ল, রক্ত, কৃষ্ণ ও পীত বর্ণের অবতারের কথা বলা হয়েছে। আমরা জানি যে শ্বেতবরাহকল্পের অষ্টবিংশতি চতুর্যুগের দ্বাপরে কৃষ্ণ আবির্ভূত হন। সত্য ও ত্রেতাযুগে শুক্ল ও রক্ত বর্ণের অবতার হয়েছেন (শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।২১ ও ১১।৫।২৪ দ্রষ্টব্য) । তাহলে বুঝতে হবে অবশিষ্ট কলিযুগে ভগবদ অবতারের অঙ্গকান্তি হবে পীতবর্ণ। অন্য কোন শ্বেতবরাহকল্পের অষ্টবিংশতি চতুর্যুগেও কৃষ্ণ দ্বাপরে আবির্ভূত হয়েছেন এবং সেই চতুর্যুগের কলিতে পীতবর্ণ অবতার এসেছেন। তাই শ্লোকে বলা হয়েছে পূর্বে পীতবর্ণ ধারণ করে অবতীর্ণ হয়েছেন। কাজেই এই শ্লোকেও এটা প্রতিপন্ন হয় যে কলিযুগ অবতারের অঙ্গকান্তি অকৃষ্ণ, অর্থাৎ “যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ।”
᯽দ্বিতীয় শঙ্কা নিবারণ᯽
তারা দাবী করেন এখানে নাকি অবতার সংশ্লিষ্ট কিছু বলাই হয়নি।
তাদের এই দাবীও ভুল। এই শ্লোকের টীকায় শ্রীধর স্বামীপাদ লিখেছেন, ত্বিষা কৃষ্ণং কৃষ্ণাবতারম। অনেন কলৌ কৃষ্ণাবতারস্য প্রাধান্যং দর্শয়তি।
শ্রীধর স্বামী নিশ্চয়ই অজ্ঞতাবশত এখানে অবতার কথা লিখেননি! তাছাড়া যারা এরকম দাবী করেন তারা কখনো ভাগবতম পড়ে দেখেননি এটা নিশ্চিত। কেবল গৌড়ীয় বৈষ্ণবের সমালোচনা করার জন্য কোন একটি ভাষ্যর উদ্ভট অনুবাদ প্রদর্শন করে জ্ঞানী সাজার চেষ্টা করেন। শ্রীমদ্ভাগবতের উক্ত অধ্যায় অর্থাৎ একাদশ স্কন্ধের পঞ্চম অধ্যায়ের ২১-৩০ নং শ্লোক পর্যন্ত নারদমুনি বসুদেব কে সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের ভগবদ আরাধনা পদ্ধতি এবং অবতার সম্পর্কে বলেছেন এবং ৩১ নং শ্লোকে বলছেন,
ইতি দ্বাপর উর্বীশ স্তবন্তি জগদীশ্বরম্।
নানাতন্ত্রবিধানেন কলাবপি তথা শৃণু।।
হে, রাজন এইভাবে দ্বাপর যুগের মানুষেরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতির বন্দনা করতেন।কলিযুগেও মানুষ দিব্য শাস্ত্রাদির বিবিধ বিধিনিয়মাদি অনুসরণের মাধ্যমে ভগবানের আরাধনা করে থাকেন। এখন আমার কাছে এই বিষয়ে শ্রবণ করুন। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।৩১)
যেহেতু পূর্ববর্তী শ্লোকসমূহে অন্য তিনযুগের অবতার এবং আরাধনা পদ্ধতি বর্ণণা করেছেন এবং এই শ্লোকে কলিযুগের আরাধনা পদ্ধতি বর্ণণা করার কথা বলছেন সেহেতু তৎপরবর্তী শ্লোকে অর্থাৎ “কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং........” এই শ্লোকে যে কলিযুগাবতারের কথা বলবেন তাতে সন্দেহ নেই।
𖣔সাদৃশ্য নিরূপণ ও শ্রীমন্মহাপ্রভুর ভগবত্বা প্রমাণ𖣔
গৌড়ীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্লেষণ
কৃষ্ণ বর্ণং: কৃষ্ণেতি বর্ণদ্বয়কীর্ত্তনপরং কৃষ্ণোপদেষ্টারং কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি বর্ণদ্বয় কীর্তনেন সদা কৃষ্ণানুসন্ধানতৎপরমিতি যাবৎ
অর্থাৎ, যিনি ‘কৃষ্ণ’ এই বর্ণদ্বয় কীর্তনপর কৃষ্ণোপদেষ্টা অথবা ‘কৃষ্ণ’ এই বর্ণদ্বয় কীর্তনের দ্বারা কৃষ্ণানুসন্ধান তৎপর।
শ্রীমন্মহাপ্রভু সর্বদা কৃষ্ণনাম কীর্তন করতেন এবং তদ্বারা কৃষ্ণানুসন্ধান অর্থাৎ কৃষ্ণকে পাওয়ার চেষ্টা করতেন। যেহেতু তিনি ছিলেন ভক্ত রূপে ভগবদা অবতার।
সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম: অঙ্গে শ্রীমন্নিত্যানন্দাদ্বৈত- প্রভুবরৌ উপাঙ্গানি তয়োরাশ্রিতাঃ শ্রীবাসাদিশুদ্ধভক্তাঃ অস্ত্রানি হরিনাম শব্দাদীনি পার্ষদাঃ গদাধরদামোদরস্বরূপ- রামানন্দ- সনাতন- রূপাদয়ঃ তৈঃ সহ নিত্যবর্তমানঃ যঃ ত্বং
অর্থাৎ, যাহার ‘অঙ্গ’ শ্রীমন্নিত্যানন্দাদ্বৈত প্রভুদয় এবং উপাঙ্গ তদাশ্রিত শ্রীবাসাদি শুদ্ধভক্তগণ যাহার অস্ত্র হরিনাম শব্দ এ পার্ষদ শ্রী গদাধর- দামোদরস্বরূপ- রামানন্দ- সনাতন- রূপাদি।
ত্বিষা অকৃষ্ণং: কান্ত্যা পীতং গৌরং বা অন্তঃকৃষ্ণং বহির্গৌরং রাধাভাবদ্যুতিসুবলিতং কৃষ্ণস্বরূপং শ্রীমদগৌরসুন্দরমিত্যর্থঃ
অর্থাৎ, সেই অন্তঃকৃষ্ণ বহির্গৌর রাধাভাবদ্যুতিসুবলিত শ্রীমদগৌরসুন্দরকে
যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনৈঃ : পূজাসম্ভারৈঃ সঙ্কীর্তনং সম্যক্ কীর্তনং বহুভির্মিলিত্বাঃ উচ্চৈঃ গৌরকৃষ্ণ নাম-কথা-গান প্রচারাদি তৎপ্রধানৈঃ
যজন্তি সুমেধসঃ : আরাধয়ন্তি সু সুষ্ঠু মেধা যেষাং তে শুক্ল রক্তস্তথা পীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ ইতি ‘কলাবপি তথা শৃণু’ ইত্যাদীনাং তাৎপর্য্যার্থ ধারণাবতি যেষাং বুদ্ধিঃ শুভমানা ভবেৎ তে এব নান্যে
অর্থাৎ, গৌরসুন্দরকে কলিযুগে সুমেধাগণ সঙ্কীর্তন যজ্ঞের দ্বারা আরাধনা করিয়া থাকেন।
শ্রীধরী টীকা অনুসারে বিশ্লেষণ
শ্রীধর স্বামী লিখেছেন,
রূক্ষতাং ব্যাবর্ত্তয়তি, ত্বিষা কান্ত্যাঽকৃষ্ণমিন্দ্রনীলমণিবদুজ্জ্বলম্;
অর্থাৎ, কলিযুগাবতারে কৃষ্ণবর্ণ দেহরুক্ষ নয়, অঙ্গকান্তি অকৃষ্ণ, ইন্দ্রনীলমণির ন্যায় উজ্জ্বল।
শ্রীমন্মহাপ্রভুর গায়ের রং ছিল অকৃষ্ণ এবং ইন্দ্রনীলমণির ন্যায় উজ্জ্বল। কাজেই শ্রীধর স্বামীর টীকায় বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের সাথে সদৃশ।
অঙ্গানি হৃদয়াদিনী, অর্থাৎ হৃদয় আদি অঙ্গ থাকবে।
এই বৈশিষ্ট্য শ্রীমন্মহাপ্রভুর সাথে মেলে।
উপাঙ্গানি কৌস্তভাদীনি, অর্থাৎ কৌস্তভ আদি উপাঙ্গ* ধারণ করবেন।
মহাপ্রভুর বাল্যকালে তার মাতামহ নীলাম্বর চক্রবর্তী যিনি ছিলেন তৎকালীন মহান পন্ডিত এবং প্রসিদ্ধ জ্যোতিষ তিনি মহাপ্রুভর শ্রীঅঙ্গে এসকল চিহ্ন শণাক্ত করেন।
অস্ত্রাণি সুদর্শনাদীনি, অর্থাৎ সুদর্শন আদি অস্ত্র ধারণ করবেন।
ছন্ন অবতার হওয়ায় মহাপ্রভু সরাসরি অস্ত্র প্রদর্শন করেননি। কিন্তু বহুবার পার্ষদবর্গকে অস্ত্রধারী রূপ দেখিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ সার্বভৌম ভট্টাচার্য-কে চতুর্ভূজ ও ষড়ভূজ রূপ দেখান।
আত্মনিন্দা করি লৈল প্রভুর শরণ।
কৃপা করিবারে তবে প্রভুর হৈল মন।।
নিজ-রূপ প্রভু তারে করাইল দর্শন।
চতুর্ভুজ-রূপ প্রভু হৈলা তখন।।
দেখাইল আগে তারে চতুর্ভুজ-রূপ।
পাছে শ্যাম-বংশীমুখ স্বকীয় স্বরূপ।।
দেখি সার্বভৌম দন্ডবৎ করি পড়ি।
পুনঃ উঠি স্তুতি করে দুই কর যুড়ি।।
(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত মধ্যলীলা ৬।২০১-২০৪)
পার্ষদা সুনন্দাদয়ঃ তৎসহিতম্, অর্থাৎ সুনন্দ আদি পার্ষদের সহিত।
ভগবান যখন আবির্ভূত হন তখন সকল পার্ষদও বিভিন্নরূপে আবির্ভূত হন। গৌরলীলায়ও সকল পার্ষদবৃন্দ চিন্নয় জগৎ হতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
যজ্ঞৈর্চনৈঃ, সঙ্কীর্ত্তনং নামোচ্চারণং স্তুতিশ্চ তৎপ্রধানৈঃ, সুমেধসো বিবেকিনঃ - অর্থাৎ সুমেধাসম্পন্ন বিবেকবান মানুষেরা সঙ্কীর্তন তথা নামোচ্চারণ দ্বারা তার স্তুতি করার মাধ্যমে যজ্ঞানুষ্ঠান করবেন।
আজ সমস্ত পৃথিবীতে নামযজ্ঞের দ্বারা শ্রীমন্মহাপ্রভুরই উপাসনা হচ্ছে।
কাজেই উক্ত বিশ্লেষণ হতে এটা স্পষ্ট যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং ভগবান।
᯽তৃতীয় শঙ্কা নিবারণ᯽
এখন গৌড়ীয় বৈষ্ণব- বিদ্বেষীরা প্রশ্ন তুলতে পারে যে ভগবান গীতায় বলেছেন তিনি সাধুদের পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তো কখনো অস্ত্র ধরে দুষ্টদমন করেননি। তাহলে তিনি ভগবান কীভাবে হলেন?
দেখুন এর সমাধান
শ্রীমদ্ভাগবতে কলিযুগাবতার সম্বন্ধে বলা হয়েছে,
ইত্থং নৃতির্যগৃষিদেবঝষাবতারৈ-
র্লোকান বিভাবয়সি হংসি জগৎপ্রতীপান।
ধমং মহাপুরুষ পাসি যুগানুবৃত্তং
ছন্নঃ কলৌ যদভবোস্ত্রীযুগোঽথ স ত্বম্।।
হে ভগবান্, এইভাবে আপনি নর, পশু, ঋষি, দেবতা, মৎস্য অথবা কূর্মরূপে অবতরণ করে সমগ্র জগৎ পালন করেন এবং অসুরদের সংহার করেন। হে ভগবান, আপনি যুগ অনুসারে ধর্মকে রক্ষা করেন। কিন্তু কলিযুগে আপনি আপনার ভগবত্তা প্রকাশ করেন না, তাই আপনাকে ত্রিযুগ বলা হয়। (শ্রীমদ্ভাগবত ৭।৯।৩৮)
এখানে স্পষ্টত বলা হয়েছে যে কলিযুগের অবতার নিজের ভগবত্বা প্রদর্শন করবেন না। কাজেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে অস্ত্র দ্বারা সর্বসমক্ষে দুষ্ট সংহার করবেন না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুষ্ট সংহার না করলে তো গীতার বাণী মিথ্যা হয়ে গেল। এই শঙ্কার সমাধান হল মহাপ্রভু যে দুষ্টের দমন করেননি তেমনটি নয়।
জগাই-মাধাই নামক মহাপাতকী কে ভগবদপ্রেম প্রদান করে উদ্ধার করেছিলেন। এখানে কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ আসুরিক প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করেছিলেন। অর্থাৎ, প্রচ্ছন্ন ভাবে দুষ্টের দমনপূর্বক সাধুদের পরিত্রাণ করেছিলেন। অনুরূপে চাঁদকাজি, গোপাল চাঁপাল আদি-কেও প্রেম দান করেছিলেন। কাজেই গীতা এবং ভাগবত উভয়ের বাণীর সামঞ্জস্যতা সাধিত করেছেন মহাপ্রভু।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, শ্রীমন্মহাপ্রভুই স্বয়ং ভগবান এবং কলিযুগ পতিতপাবন অবতারী।
গৌরাঙ্গ!
জয় শ্রী রাধে!
হরে কৃষ্ণ!